মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 

আমার বিশ্বাসঃ ২৭-২৮ এর শহীদরা নব প্রজন্মের প্রেরনা

 
   

জিবনআহুতির শেষমুহর্ত পর্যন্ত ত্যাগি বিপ্লবীরা তাদের নিঃস্বার্থ দেশপ্রেম এবং মুক্তির চেতনাকে সমুন্নত রেখেছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে শেখ মুজিবের স্বৈরচারী বাকশাল সরকারের নাগপাশে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে অসহায় জাতিকে মুক্ত করার লক্ষ্যেই অকুতভয় সূর্যসন্তানদের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছিল মহতী ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫, সালের সফল বৈপ্লবিক সেনা অভ্যুত্থান। চিরউন্নত শিরের আলোকবর্তিকাদের প্রত্যেকেই ফাঁসির মঞ্চে যেতে যেতে বলেছিল, ‘আমরা কোন অন্যায় করিনি, সত্য এবং দেশ ও দেশবাসীর মঙ্গলের জন্যই বিবেকের তাড়নায় আমরা যা করার তাই করেছি। তারপর, জল্লাদ যখন ফাঁসির রজ্জু গলায় পরিয়ে দিচ্ছিল, তখন দুর্জয় সেই কালজয়ী বীরদের মুখে উচ্চারিত হচ্ছিল কলমা এ তৈয়ব। তাদের এই আত্মত্যাগের সাহসিকতা এবং মহিমায় অভিভূত হয়ে প্রতিটি জেলবন্দী অশ্রুসজল চোখে বুক চাপড়ে আল্লাহ্‌র দরবারে ফরিয়াদ জানাচ্ছিল, ‘মালিক এ তোমার কেমন বিচার!

২০১০ সালের ২৮শে জানুয়ারী অতিপ্রত্যুষে ঢাকার সেন্ট্রাল জেলে সম্পূর্ণভাবে বেআইনি এই হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছিল প্রতিহিংসা পরায়না সরকার প্রধান শেখ হাসিনা প্রকৃত বিবেকবান প্রতিটি দেশপ্রেমিক এবং বিশ্ব বিবেক ক্যাঙ্গারু আদালতের বিচার প্রক্রিয়া এবং রায়কে জুডিশিয়াল মার্ডার বলে আখ্যায়িত করে, কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ভারত বিশেষকরে কোলকাতয় চিহ্নিত একটি গোষ্ঠীকে অতিউল্লাসে আত্মহারা হতে দেখা যায়। জিঘাংসা মেটানোর পর হাসিনা বলেছিল, আগস্ট বিপ্লবের নায়কদের(খুনিদের) ফাঁসিতে দেশবাসীর কেউই নাকি দুঃখ কিংবা সমবেদনা প্রকাশ করেনি। তার এই বক্তব্যের সত্যতা যাচাইয়ের ভার রইলো পাঠকদের উপর।

আগস্ট বিপ্লবের চেতনা, নীতি আদর্শের সাথে বেঈমানি করে সেনা পরিষদের মধ্যমনি জেনারেল জিয়া ক্ষমতার কেন্দ্রে উপবিষ্ট হবার পরথেকে বিগত চার দশকের উপর সময়কালে যারা জাতীয়তাবাদ এবং ইসলামী মূল্যবোধের ধ্বজাধারীর দাবীদার হয়ে আওয়ামী বাকশালীদের সাথে সহবাস করে ক্ষমতা উপভোগ করে আজ দেশ ও দেশবাসীকে ঠেলে দিয়েছেন এক অজানা অনিশ্চিয়তার ঘোর অমানিশার দিকে। দেশকে ভারতের একটি করদ রাজ্য কিংবা অঙ্গরাজ্যে পরিনত করে ১৮ কোটি জনগোষ্ঠীকে তাদের গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ করার পরিকল্পনার বাস্তবায়নে ক্ষমতাসীনদের সবাই শুধুমাত্র ক্ষমতা আর গোষ্ঠীস্বার্থে মদতই দিয়ে এসেছেন তারা দলমত নির্বিশেষে দেশ ও দেশবাসীর এই দুরাবস্থা দেখে জান্নাত এ ফেরদৌসে অবস্থানকারী বীর শহীদ কর্নেল ফারুক, কর্নেল শাহরিয়ার, কর্নেল মহিউদ্দিন, মেজর হুদা, এম্ব্যেসেডার মেজর মহিউদ্দিনের বিদেহীআত্মা নিশ্চয়ই ভরাক্রান্ত হৃদয়ে হতভাগ্য দেশ ও দেশবাসীর তমশাচ্ছন্ন ভবিষ্য ভেবে করুনার দীর্ঘশ্বাস ফেলছে।

অকল্পনীয় দুঃসাহসিক ১৫ই আগস্ট বইপ্লবিক অভ্যুত্থান জাতিকে স্বৈরতন্ত্রের জাতাকলের নিষ্পেষণ থেকে শুধু রক্ষাই করেছিল তাই নয়, এই পট পরিবর্তনের মাধ্যমে সেই সন্ধিক্ষনে কতগুলো মৌলিক সমস্যারও সমাধান করা হয়েছিল।

১। একটি চরম দুর্নীতিপরায়ন সরকার যার বদান্যতায় বাংলাদেশ বিশ্ব পরিসরে খেতাব লাভ করেছিল তলাহীন ঝুড়ি হিসাবে তাকেই উপড়ে ফেলা হয়েছিল।

২। স্বৈরশাসনের কবল থেকে দেশ এবং জাতি মুক্তি পেয়েছিল।

৩। গনতন্ত্র বিরোধী বাকশালী লোমহর্ষক একনায়কত্তের অবসান ঘটিয়ে কবর দেয়া হয়েছিল

৪। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার অধীনস্থ অসাংবিধানিক ভাবে গড়ে তোলা কুখ্যাত রক্ষী বাহিনীর বিলুপ্তি ঘটানো হয়েছিল।

৫। দেশবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলো রক্ষী বাহিনীর সন্ত্রাসী হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হয়ে যাওয়ায়।

৬। স্বাধীন দেশে শেখ মুজিব কল্পনার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে যে দানবীয় হত্যালীলা শুরু করে ৪০০০০ এরও বেশি মানুষ খুন করেছিল তার পতনের মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। মুজিব সরকারের উখ্যাত না ঘটলে দাম্ভিক ঐ স্বৈরশাসকের দাবড়ে দেয়া লাল ঘোড়ার খুঁড়ের নিচে পিষ্ট হয়ে আরও অগুন্তি সাধারন নিরীহ বিবেকবান লোকের প্রানহানি ছিল ভবিতব্য।

৭। বাংলাদেশী জনগনের মনে চিরলালিত প্রত্যাশা গনতন্ত্রের পুনঃর্প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিল আগস্ট বিপ্লব।

৮। গনতান্ত্রীক সমাজ ব্যেবস্থা প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত বাক এবং গনমাধ্যমের স্বাধীনতা পুনঃর্প্রতিষ্ঠীত করা হয়েছিল ১৫ই আগস্ট বিপ্লবের পরই।

৯। বিপ্লবোত্তর মোশতাক সরকারকে গণচীন, পাকিস্তান, সৌদিআরব সহ মুসলিম জাহান এবং বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের স্বীকৃতি দেয়ায় সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল।

 নিবেদিতপ্রান নিঃস্বার্থ মুক্তিযোদ্ধাদের উল্লেখিত আত্মত্যাগের অর্জন নতুন প্রজন্মকে উপ্রেরনা যোগাবে দেশের স্বাধীনতা এবং জাতির সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রামে ব্রতি হতে এই প্রত্যাশা বুকে ধারন করেই বেচে রয়েছে এক প্রান্তিক পথিক।