মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 

বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের সিদ্ধান্ত

 
   
 

 

গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে এবং দেশবাসীকে শ্বাসরূদ্ধকর পরিবেশ থেকে মুক্তি দেবার জন্য সেনা পরিষদ একটি বৈপ্লবিক অভ্যুত্থান সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। বাকশাল কায়েমের ফলে দেশ এক চরম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক দলগুলোর সব কয়টাই তখন নিষিদ্ধ এবং রাজনৈতিক তৎপরতাকে বলপূর্বক আন্ডারগ্রাউন্ডে ঠেলে দিয়েছিল বাকশাল সরকার।

আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে দেশের নতুন পরিসি'তি নিয়ে মত বিনিময় করতে লাগলাম। জাতীয় অবস্থার পর্যালোচনা করে সবাই একমত হলাম, একদলীয় নিষ্পেষনের শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে অবিলম্বে। পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে গণতন্ত্রিক এবং মানবিক অধিকার। বাকশালের শিকড় বাংলার মাটিতে প্রথিত হবার আগেই উপড়ে ফেলতে হবে। একনায়কত্বের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে জনগণকে মুক্ত করার সাথে সাথে জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে হবে। কিন্তু এই রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করার ন্যায়সঙ্গত অধিকার যাদের সে সমস্ত দেশপ্রেমিক এবং প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর শক্তি ও সামর্থ্য অত্যন্ত কম। স্বৈরশাসনের ষ্টিমরোলারের পেষণে তাদের আরো দুর্বল করে ফেলা হচ্ছে দিন দিন। এ ক্ষেত্রে তাদের পক্ষে সরকার বদল করার কোন বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব নয়।

কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। শিকড় গেড়ে বসার আগেই একনায়কত্বের অবসান ঘটাতে হবে। রাজনৈতিক মহল থেকে অনেকেই ঈঙ্গিত দিলেন, সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক অংশ জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে অগ্রণীর ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসতে ইচ্ছুক হলেই সম্ভব হবে এই একনায়কত্ব ও স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে জাতিকে মুক্ত করা। তাদের এ ধরণের ঈঙ্গিতের যৌক্তিকতা অনুধাবন করতে পেরেছিলাম আমরা। যেখানে সাংবিধানিক ও নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একনায়কত্বের অবসান ঘটানো সম্ভব নয় সেখানে স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করার জন্য বৈপ্লবিক পদক্ষেপ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। বৈপ্লবিক পদক্ষেপের মাধ্যমেই উৎখাত করতে হয় স্বৈরাচারী সরকার। এর কোন বিকল্প থাকে না বলেই জনগণ স্বাগত জানায় ঐ ধরণের যে কোন বৈপ্লবিক পদক্ষেপকে। স্বতঃস্ফুর্ত জনসমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে বিপ্লব অর্জন করে তার নৈতিক ও আইনগত বৈধতা। খন্দোকার মোশতাক আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রীমনা নেতৃবৃন্দের তরফ থেকে একই প্রকার মনোভাব প্রকাশ করে বলেছিলেন যে, জাতির বৃহত্তর স্বার্থে যে কোন বৈপ্লবিক উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে সর্বোতভাবে সক্রিয় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছেন তিনি এবং আরো অনেকেই। মোশতাক সাহেবের এ ধরণের উক্তির পেছনে আওয়ামী লীগের একটা বড় অংশের সমর্থন ছিল। ইস্তফা দেবার পর জেনারেল ওসমানীর সাথে দেখা করতে গেলে বাকশাল সংক্রান্ত বিষয়ে আলাপের সময় তিনি মন্তব্য করেছিলেন, “মুজিব খানকে সরাতে হবে। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে?”

এদিকে বাকশালী একনায়কত্ব স্থাপন করেও শেখ মুজিব তার ক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। সিদ্ধান্ত হল- তাকে আজীবন রাষ্ট্রপতি হিসাবে ঘোষণা দেবে বাকশাল। ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে এক সমাবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেয়ার কথা প্রচার করা হয়। উল্লেখ্য, ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে তাকে পাঁচ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত করা হয়েছিল। সেটাতে শেখ মুজিব সন্তুষ্ট হতে পারেননি বলেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল তাকে আজীবন রাষ্ট্রপতি বানাবার। আরো খবর পাওয়া গেল সমস্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত এবং বিভিন্ন শ্রেণীর জনগণের মাঝ থেকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় সরকার বিরোধী মনোভাবাপন্ন দুই লক্ষ লোকের একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলা গভর্ণর ও তাদের অধিনস্থ রক্ষীবাহিনীর সাহায্যে ঐ তালিকাভুক্ত লোকদের মেরে ফেলা হবে। এই নীলনকশা বাস্তবায়িত করে শেখ মুজিব চেয়েছিলেন বাংলাদেশের জনগণের প্রতিবাদী কন্ঠকে আগামী কয়েক দশকের জন্য স্তব্ধ করে দিতে। এভাবে রাজনৈতিক বিপক্ষ শক্তিকে সমূলে উৎপাটন করার এক হীন চক্রান্ত করা হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশেই।

 
 
 
     
     
  Design & Developed By: Hemu
All Rights Reserved 2008 @www.majordalimbangla.net