মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 

চাকুরীচ্যুত হওয়ার পরও জনাব তাজুদ্দিন আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

 
   
 

 

যদিও তাজুদ্দিন আহমদের নীতিসমূহ আমরা যুদ্ধকালীন সময় সমর্থন করিনি তবুও তার কিছু ব্যক্তিগত গুনাবলীর জন্য আমরা তাকে সম্মান করতাম। তার চাকুরিচ্যুতির খবর জানামাত্র আমি সেদিন সন্ধ্যায় তার সরকারি বাসভবনে দেখা করতে যাই।

তিনি বাড়ি ছেড়ে দেবার জন্য গোছগাছ করছিলেন। বাড়ির লনে বসেই আলাপ হল। আলাপ শেষে বেরিয়ে আসছিলাম ঠিক তখন তিনি হঠাৎ করে জানতে চাইলেন, ভবিষ্যতে যোগাযোগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে আমি তাঁর সাথে দেখা করব কিনা? জবাবে বলেছিলাম, আমার তরফ থেকে কোন বাধা নেই। ঠিক হল যোগাযোগ হবে গোপনে।

একদিন অফিসে বসে আছি হঠাৎ আমার চাচা শ্বশুড় জনাব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবি-লেখক-সাংবাদিক এবং পাকিস্তান আমলে দৈনিক পাকিস্তান বর্তমানে বাংলাদেশ টুডের মালিক) এসে হাজির। অপ্রত্যাশিতভাবে তাকে দেখে স্বসম্ভ্রমে উঠে দাড়িয়ে তাকে বসতে দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
-কাক্কু, আপনি হঠাৎ কি মনে করে? খবর দিলেইতো পারতেন আমি নিজে গিয়ে দেখা করে আসতাম। 
-বিশেষ প্রয়োজনে এসেছি। তাজুদ্দিন তোমার সাথে জরুরীভাবে দেখা করতে চায়। সম্পর্কে কাক্কু এবং তাজুদ্দিন সাহেব ভায়রা ভাই।
-কোথায়? জানতে চাইলাম।
-তাঁতিবাজারে।
-লাঞ্চের পর আগামীকাল আমি আর নূর আসব। তিনি চলে গেলেন। পরদিন সময়মত গিয়ে পৌঁছতেই দেখি জনাব তাজুদ্দিন অপেক্ষা করছেন। আমরা দুইজনই তার বিশেষ পরিচিত। দোতালার একটি নিভৃত কক্ষে আমাদের বৈঠক শুরু হল কুশলাদি বিনিময়ের পর।
-দেশের অবস্থা সম্পর্কে কি মনে করছেন? প্রশ্ন করলেন তিনি।
-যে দেশ বানিয়েছেন তার সর্ম্পকে ভাবনার কি কোন অন্ত আছে?
-দেশতো আপনারাই স্বাধীন করেছেন। 
-তাই কি? আমরাতো এভাবে দেশ স্বাধীন করতে চাইনি সেটা আপনার চেয়ে বেশি আর কারো জানার কথা নয়। চুপ করে ছিলেন তিনি। আমি বললাম,
-তাজুদ্দিন সাহেব ’৭১ এর আমাদের যুক্তিগুলোর সত্যতাই কি ক্রমান্বয়ে এই বাংলাদেশে সত্যে পরিণত হচ্ছে না? যাক অতীত নিয়ে আলোচনা না করে বলেন কেন ডেকে পাঠিয়েছেন? সরাসরি প্রশ্ন করলাম তাকে।
-দেশটাকে বাচাঁতে হবে।
-অবশ্যই। তবে কি করে?
-জনগণের মুক্তি আনা সম্ভব সমাজতন্ত্রের মাধ্যমেই।
-এ বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। সারাজীবন আপনারা বুর্জুয়া রাজনীতি করে এসে এখন সমাজতন্ত্র করবেন সেটা কি করে সম্ভব? আর জনগণই তা বিশ্বাস করবে কেন? আওয়ামী লীগতো একটা বুর্জুয়া সংগঠন। শেখ মুজিব কেন, কেউই এ দলের মাধ্যমে প্রকৃত সমাজতন্ত্র স্থাপন করতে পারবে না। আপনিও এ সত্য এতদিনে নিশ্চয়ই অনুধাবন করেছেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হল বাংলাদেশের জনগণের সম্মুখে সমাজতন্ত্রের নামে আপনারা যে বিভীষিকা তুলে ধরেছেন তাতে আগামী ৫০ বৎসরেও সমাজতন্ত্রের কথা শুনলেই এদেশের লোক আতঁকে উঠবে। তাছাড়া গ্রামে-গঞ্জে সাধারণভাবে ঘুরে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তার আলোকে বলব আমাদের জনগণ সাম্প্রদায়িক নয় এটা ঠিক; তবে তারা সমভাবেই ধর্মভীরু। আপনারা আপনাদের রাষ্ট্রীয় চার নীতির কোনটাই গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারেননি আপামর জনসাধারণের কাছে। বাংলাদেশ বলতে ঢাকা, চিটাগাং বোঝাচ্ছি না, বোঝাচ্ছি ৬৪ হাজার গ্রাম যেখানে বাস করে ৯৫% লোকজন। সমাজতন্ত্রের তত্ত্ব এ দেশের গণমানুষের কতটুকু উপকার করবে তা জানি না তবে অল্প বিদ্যায় যতটুকু বুঝি এ দেশের লোকজনকে নজর আন্দাজ করার অবকাশ নেই। উপর থেকে তাদের উপর জোর করে কিছুই চাপিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া মানুষ রক্ত মাংসের গড়া। তার জৈবিক এবং বাচাঁর চাহিদার পাশাপাশি মনের এবং আত্মিক চাহিদাও রয়েছে। মানুষ মেশিন নয়। এ সত্য বাদ দিয়ে কিছু করলে সেটা হবে নেহায়েত ক্ষণস্থায়ী। থাক, তা আপনি বলুন আপনার রাজনৈতিক পরিকল্পনা কি? আপনি একজন সুশিক্ষিত সৎ ব্যক্তি। আপনার রাজনৈতিক দর্শনের সাথে একমত না হলেও এতটুকু আস্থা রাখতে পারেন, আমরা আপনাকে একজন ভাল মানুষ বলেই মনে করি। আর একটা কথা আপনাকে স্পষ্ট করে বলতে চাই- বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত আমাদের জন্য যদি কিছু করে থাকে তবে সেটা তার স্বার্থেই সে করেছে। তবুও আমরা তাকে কৃতজ্ঞতা জানাব জাতি হিসাবে। কিন্তু ভারত এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন কি করে আমাদের সহায়ক শক্তি হতে পারে? সেটাতো তাদের নিজস্ব স্বার্থের পরিপন্থী। এদের প্রতি আপনি দুর্বল এ কথা সবাই জানে। এ ব্যাপারে আপনার কাছ থেকেই আপনার অভিমত আমরা জানতে চাই। আর সমাজতন্ত্রের দর্শন অনুযায়ী এটা কায়েম করা যায় শুধুমাত্র সর্বহারা দলের নেতৃত্বে। আপনার দল কোনটি সেটাও আমাদের জানা দরকার। গম্ভীরভাবে আমার বক্তব্য শুনে যাচ্ছিলেন জনাব তাজুদ্দিন। রাজনীতি নিয়ে এটাই ছিল আমাদের প্রথম বিশদ আলোচনা।
-রাজনৈতিকভাবে আপনারা সবাই কি এতটা সচেতন?
-সবাই বলতে আপনি কি বোঝাচ্ছেন সেটা জানি না, তবে সেনাবাহিনীর একটা বৃহৎ অংশ রাজনৈতিকভাবে অবশ্যই সচেতন।
-খুব খুশি হলাম জেনে। I can see some silver lining over the dark clouds. সমাজতন্ত্রের নীতিতে আমি বিশ্বাসী। তবে সমাজতন্ত্রের বাস্তবায়ন পদ্ধতি সব দেশেই সেদেশের বাস্তব পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করেই বের করতে হয়। ভারত একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ। তাদের দেশের অর্থনীতিতে সমাজতন্ত্রের যে প্রভাব রয়েছে সেটা অবশ্যই সোভিয়েত মডেলের নয়। গণতান্ত্রিক নীতিতে বিশ্বাসী দেশ ভারত নীতিগতভাবে আমাদের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে সাহায্য করেছে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের বেলায়ও এ কথাই বলা চলে। সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশের মুক্তিসংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সোভিয়েত ইউনিয়ন সব রকম সাহায্য করে চলেছে। রুশ বিরোধিতার মূলে কাজ করছে সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। তাদের এ চক্রান্ত কি দেশের জন্য কোন মঙ্গল বয়ে আনবে?
-দেখেন স্যার, আমি সে সমস্ত মানুষের মনোভাব আপনাকে জানিয়েছি যারা সাম্প্রদায়িক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এ দু’টো শব্দ ঠিকমত উচ্চারণও করতে পারে না; বোঝাতো দূরের কথা। এ সমস্ত আলোচনাতো শহুরে তথাকথিত বুদ্ধিজীবি সমাজের মাঝেই সীমিত। তারা জনগণের ১ কিংবা ২%ও নন। আমরা মনে করি ভারত প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক দেশ নয়। গণতন্ত্রের নামাবলী গায়ে চড়িয়ে সেখানে গত ২৫ বছর ধরে চলেছে এক পার্টির তথা এক পরিবারের শাসন। শ্রীমতি ইন্দীরা গান্ধী ‘অখন্ড ভারত’ নীতির বাস্তবায়নের জন্য পাকিস্তানকে দ্বি-খন্ডিত করার পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করেছেন। অনেকেই তাকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু আজ কিছুতেই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন স্বনির্ভর দেশ হিসাবে viable হয়ে উঠুক সেটা ভারতের কেন্দ্রিয় সরকার কোনমতেই সমর্থন করতে পারে না। পরিবর্তে তারা চেষ্টা করবে আমাদের অর্থনীতিকে ভারতের অর্থনীতির সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আমাদের উপর তাদের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে। মানে আমাদের অবস্থা হতে হবে ভুটান বা সিকিমের মত। এতে করে ভারতের অভ্যন্তরে কেন্দ্রিয় শোষণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অঞ্চলে যে সমস্ত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অঙ্গার আজ জ্বলে উঠেছে তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া যাবে যে, স্বাধীন সত্ত্বা হিসেবে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উপমহাদেশের কোন জাতির পক্ষেই আজ স্বতন্ত্রভাবে বেঁচে থাকা সম্ভবপর নয়। ভারতের আজ্ঞাধীন হয়েই বেচে থাকতে হবে তাদের। বাংলাদেশকে সব ব্যাপারে তাদের উপর নির্ভরশীল করে তুলতে পারলে ঐ সমস্ত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে ভাটা পড়বে। আর আমরা যদি স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে বিশ্বের বুকে দাড়াতে সক্ষম হই তবে সেই সমস্ত জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের অঙ্গার দাবানলে পরিণত হয়ে ভারতকে টুকরা টুকরা করে ফেলবে অল্প সময়ের মধ্যেই। ‘অখন্ড ভারতের’ স্বপ্ন কর্পুরের মত উড়ে যাবে। যেখানে বিভিন্ন অঞ্চলগুলো আজ ভারতীয় কেন্দ্রিয় দুঃশাসনের নিষ্পেষনে জর্জরিত সেখানে তাদের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হলে আমাদের অবস্থা কি হবে? বরং অধুনাকালে ঔপনিবেশিক শক্তি দ্বারা তৈরি আজকের ভারত যদি সনাতন রূপ পরিগ্রহ করে তবেই আমাদের লাভ। শুধু আমাদেরই নয় এ ভূ-খন্ডের বিভিন্ন জাতিসত্ত্বারও লাভ। বর্হিঃশক্তির শোষণ টিকিয়ে রাখার জন্য উপমহাদেশের স্বাধীন রাজ্যগুলোকে একত্রিত করে অখন্ড ভারত সৃষ্টি করার ফলেই আজ বিকশিত হচ্ছে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনগুলো। এই দ্বন্দ্বের অবসানের মাধ্যমেই একমাত্র সম্ভব এ অঞ্চলে সত্যিকারের স্থিতিশীলতা অর্জন করা। এর কোন বিকল্প নেই। ভারত একটি বহুজাতিক দেশ সেটাই বাস্তবতা। আমার বক্তব্য শুনে জনাব তাজুদ্দিন বললেন,
-ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরো আলোচনা হওয়া প্রয়োজন।
তার রাজনৈতিক দল হিসাবে জাসদের প্রতি ঈঙ্গিত করলেন তিনি। জবাবে আমি বলেছিলাম,
-জাসদ অবশ্যই আজ সরকার বিরোধী সংগ্রামে একটি অগ্রণী ভূমিকায় আছে। তারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথাও বলছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে হঠাৎ করে বেরিয়ে আসা এ দল সৃষ্টিকারীরা সত্যিই কি সমাজতন্ত্রী? তাদের নেতৃত্বের প্রায় সবারই আগমন ঘটেছে বুর্জুয়া কিংবা পেটি বুর্জুয়া শ্রেণী থেকে। কতটুকু তারা নিজেদের De-class করতে সক্ষম হয়েছে সেটা ভবিষ্যতই বলতে পারবে। ঠিক এই মুহুর্তে জাসদকে একটি সর্বহারার দল হিসাবে চিহ্নিত করার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। এভাবেই সেদিনের বৈঠক শেষ হয়। ভবিষ্যতে আবার আলোচনায় বসবো ঠিক করে আমরা বেরিয়ে এসেছিলাম। তত্ত্বগত দিক থেকে জাসদের নেতৃবৃন্দেরও একটি অংশ সোভিয়েত ইউনিয়নকে একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ এবং ভারতকে একটি গণতান্ত্রিক দেশ বলে মনে করত। তাদের ধারণা অনেকটা জনাব তাজুদ্দিনের মতই। মানে রুশ এবং ভারত বাংলাদেশের গণমুক্তি এবং সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সহায়ক শক্তি। কিন্তু জাসদের সাধারণ সদস্যদের বৃহৎ অংশই ছিলেন ভারত বিরোধী। পরবর্তিকালে জাসদের অবক্ষয়ের জন্য অন্যান্য কারণের সাথে এই দ্বন্দ্বটিকেও একটি প্রধান কারণ বলে চিহ্নিত করা চলে। নেতৃবৃন্দের মধ্যেও ভারত নীতি নিয়ে দ্বিমত ছিল সেটাও আমরা জানতাম। সেদিন জাসদের সাথে জনাব তাজুদ্দিনের সম্পর্কের কথা জেনে আমাদের মনে একটি প্রশ্ন বিশেষভাবে দেখা দেয়। তবে কি জাসদ সত্যিই ভারতের ‘বি’ টিম? তাই যদি না হবে, তবে কোন যুক্তিতে জাসদ জনাব তাজুদ্দিনের নেতৃত্ব মেনে নেবে?

এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেতে হবে। নারায়ণগঞ্জে কর্নেল তাহেরের ওখানে গিয়ে উপস্থিত হলাম একদিন। তার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ করার ফাকে জেনে নেবার চেষ্টা করলাম জনাব তাজুদ্দিনের সাথে জাসদের সম্পর্ক কি? তিনি ব্যক্তিগতভাবে জানালেন যে, জনাব তাজুদ্দিনের সাথে জাসদের কোন সম্পর্ক নেই। এতে ঘটনা আরো ঘোলাটে হয়ে উঠল। হয়তো কর্নেল তাহের এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না কিংবা জাসদের হাইকমান্ডের সাথে কোন গোপন বিশেষ মাধ্যমের সাহায্যে জনাব তাজুদ্দিন যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন যা জাসদ নেতৃবর্গের অনেকের কাছ থেকেই গোপন রাখা হয়েছে। আমাদেরই আর একজন জাসদের জনাব শাহজাহানের কাছে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল। জনাব শাহজাহানও একই জবাব দিয়েছিলেন, জাসদের সাথে জনাব তাজুদ্দিনের পার্টিগত কোন সম্পর্ক নেই।

কয়েকদিন পর জনাব তাজুদ্দিনের সাথে আমাদের দ্বিতীয় বৈঠক হয়। সে বৈঠকে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়েই আলোচনা হয়। আমি গত বৈঠকের জের টেনে বলেছিলাম,
- বাংলাদেশের তিনটি জিনিস ভারত কখনো মেনে নিতে পারবে না:-
(১)  বাংলাদেশে স্বাধীন অর্থনীতি গড়ে উঠুক।
(২) বাংলাদেশে একটি ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম হোক।
(৩) পূর্ব ও পশ্চিম বাংলা এক হয়ে একটা ভিন্ন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হোক। এ ব্যাপারে তার মতামত জানতে চাইলে জনাব তাজুদ্দিন বলেন,
-ভারত উপমহাদেশ তুলনামূলকভাবে একটা পরাশক্তি; এ সত্যকে পরিহার করলে বাংলাদেশের অস্তিত্বই বিপন্ন হবে। আমাদের বেঁচে থাকার জন্যই ভারতের সাথে একটা সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক বজিয়ে চলতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ তিনি নেপালকে তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন,
-নেপালের সাথে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। বহুলাংশে নেপাল অর্থনৈতিক বিষয়ে ভারতের উপর নির্ভরশীল তাই বলে নেপালের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের উপরতো ভারত হস্তক্ষেপ করেনি। জবাবে আমি বলেছিলাম,
-নেপাল একটি হিন্দু রাষ্ট্র। আমার জানামতে নেপালের আভ্যন্তরীন রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব অত্যন্ত প্রচন্ড। কিন্তু নেপাল ও বাংলাদেশ কি এক? বাংলাদেশ ১০কোটি মুসলমানের দেশ। এটাওতো একটা বাস্তব সত্য। এ জাতি সশস্ত্র সংগ্রাম করেছে পাকিস্তানের শোষকদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীনতা লাভ করার জন্য; দিল্লীর নিয়ন্ত্রণ মেনে নেয়ার জন্য নয়। অস্তিত্ব হবে সম্পূর্ণ এবং প্রকৃত অর্থে স্বাধীন স্বকীয়তায়। সেটাই এদেশের জনগণের আশা ও অঙ্গীকার। জনগণের এ চেতনাকে সাংগঠনিক রূপ দিতে পারলে ভারত যত বড় শক্তিধর হোক না কেন; আমাদেরকে সিকিম বানাতে পারবে কি? ১০কোটি লোককে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্ভুদ্ধ করে তুলে তাদের সংগঠিত করে যেকোন বর্হিশক্তির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে একটি দুর্ভেদ্য দূর্গে পরিণত করে গড়ে তোলা অবশ্যই সম্ভব এবং সে চেষ্টাই কি করা উচিত নয় প্রতিটি দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিকের?

এর জবাবে জনাব তাজুদ্দিন সাহেব কিছু বলেননি। তার সাথে দু’দিনের আলোচনায় একটা জিনিস পরিষ্কার বোঝা গেল ভারত সম্পর্কে তার একটা বিশেষ দুর্বলতা কিংবা বাধ্যবাধকতা রয়েছে যার বাইরে তিনি যেতে পারছেন না। এই দুর্বলতা কিংবা বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে তিনি কখনোই আমাদের কিছু বলেননি। পরবর্তী বৈঠকগুলোতে আমরাও তাকে আর বিব্রত করিনি ভারত সম্পর্ক উত্থাপন করে।

 
 
 
     
     
  Design & Developed By: Hemu
All Rights Reserved 2008 @www.majordalimbangla.net