মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 

কর্নেল তাহের ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক কমান্ডার

 
   
 

 

কুমিল্লা ব্রিগেড জনহিতকর কাজে লিপ্ত হয়। আওয়ামী লীগ সেটা অপছন্দ করে। কর্নেল তাহেরকে কমান্ড থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

জিয়াউর রহমানের জায়গায় ব্রিগেড কমান্ডার হিসাবে পোষ্টেড হলেন আমার পূর্ব পরিচিত এবং সুহৃদ কর্নেল তাহের। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা সর্বদাই যোগাযোগ রাখতাম ঘনিষ্ঠভাবে। তরুণ কর্নেল তাহের ছিলেন অসীম সাহসী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

সদ্য প্রতিষ্ঠিত সেনাবাহিনীতে অবকাঠামো গড়ে তোলা ছিল অত্যন্ত দূরূহ কাজ। আমাদের প্রয়োজনীয় প্রায় কিছুই নেই তখন। নেই পর্যাপ্ত হাতিয়ার, ইকুইপ্টমেন্ট, পোশাক-পরিচ্ছদ, নেই টুপি, বুট, প্রয়োজনীয় রশদপত্র এবং প্রশিক্ষণের সরঞ্জাম। কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে কুমিল্লায় সিদ্ধান্ত নিলাম যুদ্ধ বিধ্বস্ত ক্যান্টনমেন্টকে বাসপযোগী করে গড়ে তোলার সাথে সাথে আমাদের অপারেশন এরিয়াতে গিয়ে পুর্নঃগঠন কাজে জনগণকে আমরা সাধ্যানুযায়ী সাহায্য করব। রাস্তাঘাট মেরামত, ব্রিজ কালভার্ট ঠিক করা, বাড়ি-ঘর তৈরির কাজে সাহায্য করা হবে। হেলথ সার্ভিস, ধ্বংসপ্রাপ্ত স্কুল কলেজগুলোকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা প্রভৃতি কাজে আমরা স্থানীয় জনগণের প্রচেষ্টায় সাহায্য করব কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই আমাদের উদ্ধুদ্ধ করেছিল এ ধরণের উদ্যোগ নিতে। আমাদের এ উদ্যোগকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানিয়েছিল জনগণ। এই ধরণের কর্মতৎপরতায় আমরা জনগণের মনে এই ধারণা জন্মাতে সক্ষম হয়েছিলাম যে, শোষণমূলক পাক বাহিনী এবং বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে মূল্যবোধ ও চারিত্রিক ব্যাতিক্রম রয়েছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী জনগণের সেবায় নিবেদিত প্রাণ এবং দেশপ্রেমিক। জনগণকে শোষণ এবং নির্যাতন করার জন্য এ সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করা যাবে না।

সেনা বাহিনীর জনপ্রিয়তাই শুধু যে বেড়ে গিয়েছিল আমাদের তৎপরতায় তাই নয়; আমাদের সর্ম্পকে জনগণের মধ্যে গড়ে উঠেছিল একটা বিশ্বাসযোগ্য নির্ভরশীলতা। আমাদের এ ধরণের গঠনমূলক তৎপরতার সাফল্যের কথা ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের সর্বত্র। আমাদের সাফল্য এবং ইতিবাচক দিকগুলো অন্যান্য ফরমেশনের দেশপ্রেমিক সচেতন অংশের মাঝে অভূতপুর্ব সাড়া জাগিয়েছিল। যার ফলে অন্যান্য জায়গায় বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরাও এ ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এ ধরণের গণমুখী ভূমিকা পালনের জন্য অল্প কিছুদিনের মধ্যেই শাসকমহল এমনকি সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠিও আতংকিত হয়ে উঠে। জনগণের সাথে সেনাবাহিনীর এ ধরণের সুসম্পর্ক এবং বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে উঠাকে তারা তাদের স্বার্থের পরিপন্থী বলে মনে করে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ জুড়ে তখন ব্যাপক রিলিফ তৎপরতা চলছিল। রিলিফ বিতরণের ক্ষেত্রে স্থানীয় এবং কেন্দ্রিয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের অসাধুতার কারণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনেরা রিলিফ পাচ্ছিলেন না। আমরা আমাদের অধিনস্ত এলাকায় রিলিফ বিতরণের ব্যাপারে সবরকম দুর্নীতির বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার ফলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা ঠিকমত রিলিফ সামগ্রী পান। এতে বিশেষভাবে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের স্বার্থে আঘাত লাগে ফলে তারা আমাদের বিরুদ্ধে ভীষণভাবে চটে যান। এরই ফলে পার্টি প্রধান শেখ মুজিব জেনারেল শফিউল্লাহর মাধ্যমে এক আদেশ জারি করে আমাদের গণমুখী সমস্ত তৎপরতা বন্ধ করে দেন। আদেশের স্বপক্ষে যুক্তি হিসেবে প্রচার চালানো হয়- সেনাবাহিনী সেবামূলক প্রতিষ্ঠান নয়।