মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 

আর্মিতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়

 
   
 

ব্রিগেডিয়ার জিয়াউর রহমানকে সুপারসিড করে ব্রিগেডিয়ার শফিউল্লাহকে চীফ অব ষ্টাফ পদে নিয়োগ করায় আর্মিতে আশংকাজনক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। শেখ মুজিবর রহমান সেটা জানতে পেরে আমায় ডেকে পাঠান; ঘনিষ্টতার সুবাদে তিনি আমাকে প্রায়ই ডেকে পাঠাতেন খবরা-খবর নিতে। বিশেষ করে সেনাবাহিনীর ভেতরের খবর জানতে চাইতেন তিনি।

৩২নং ধানমন্ডিতে গিয়েই তার সাথে দেখা করলাম। তিনি জানতে চাইলেন শফিউল্লাহকে সেনা প্রধান বানানোর সিদ্ধান্তের ফলে সেনাবাহিনীতে কি প্রতিক্রিয়া হয়েছে? আমি পরিষ্কারভাবে তাকে জানালাম- তার এ সিদ্ধান্ত সেনাবাহিনীতে অত্যন্ত বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। আমি তাকে বলেছিলাম অন্যায়ভাবে ব্রিগেডিয়ার জিয়াকে তার ন্যায্য পদে নিয়োগ না করে শেখ মুজিব অত্যন্ত ভুল করেছেন। কারণ এ সিদ্ধান্তে শুধু যে প্রচন্ড ক্ষোভই সেনাবাহিনীতে সৃষ্টি হয়েছে তা নয়; সরকার এবং সেনাবাহিনীর মাঝে ভুল বুঝাবুঝিরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সবাই তাকেই একান্তভাবে দায়ী করেছে জিয়াউর রহমানের প্রতি এ অবিচার করার জন্য। ফলে তারই ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে সেনাবাহিনীর সর্বস্তরের সদস্যদের কাছে। অবিলম্বে এ ভুলের সংশোধন হওয়া উচিত। আমার বক্তব্য শুনে শেখ মুজিব সেদিন বলেছিলেন, কর্নেল ওসমানীর পরামর্শ অনুযায়ীই এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তিনি। সিদ্ধান্ত বদলিয়ে এই মূহুর্তে শফিউল্লাহকে সরিয়ে জিয়াউর রহমানকে চীফ বানানো তার জন্য বিব্রতকর হয়ে দাড়াবে। তিনি এ জবাব দিয়েছিলেন তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে। তবে তিনি কথা দিয়েছিলেন কিছুদিন পর জিয়াউর রহমানকে চীফ অব ষ্টাফ বানানোর কথা তিনি পুর্নবিবেচনা করবেন। তার এ বক্তব্য অনেক কারণেই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। তবুও আমি তার প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বাস করে তাকে পরামর্শ দিয়েছিলাম যতদিন শফিউল্লাহ চীফ থাকেন ততদিন ব্রিগেডিয়ার জিয়াউর রহমানকে সাধারণ ব্রিগেড কমান্ডার কিংবা চীফ অব ষ্টাফের পিএসও হিসাবে না রেখে উপপ্রধান হিসাবে নিয়োগ করলে সেনাবাহিনীতে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে সেটা অনেকাংশে কমে যাবে। জনাব মুজিব আমাকে কথা দিয়েছিলেন এ ব্যাপারে তিনি চিন্তা-ভাবনা করে দেখবেন। তিনি আমাকে একইসাথে অনুরোধ করেছিলেন, তার এই অভিমত ব্যক্তিগতভাবে ব্রিগেডিয়ার জিয়াউর রহমানকে জানাতে এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রচার করতে। পরবর্তী সময়ে শেখ মুজিবের নির্দেশে আর্মিতে উঈঙঝ (ডেপুটি চীফ অব ষ্টাফ) পদ সৃষ্টি করা হয় এবং মেজর জেনারেল হিসাবে পদোন্নতি দিয়ে জিয়াউর রহমানকে সে পদে নিয়োগ করা হয়। এখানে উল্লেখ্য, যোগ্য চীফ অব ষ্টাফ হিসাবে জনাব শফিউল্লাহর পদমর্যাদাও ছিল মেজর জেনারেল। আমাদের সবার প্রিয় জেনারেল জিয়াউর রহমানের চীফ অব ষ্টাফ পদে উন্নতির যে প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন তার বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রইলাম আমরা।