মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 

বাকশালীরা

 
   
 

 

বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানী এবং জনাব মঈনুল হোসেন যখন বিরোধিতা করে পদত্যাগ করেন তখন সুযোগ সন্ধানীদের অনেকেই বাকশাল এ যোগদান করার জন্য লাইন দিয়েছিল।

বাংলাদেশের কম্যুনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফরহাদ ও মোজাফফর ন্যাপ শেখ মুজিবের এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রণয়নকে অভিনন্দন জানান। তথাকথিত জাতীয় দল গঠিত হওয়ার ফলে দেশের সব রাজনৈতিক দলের বিলুপ্তি ঘটে। আওয়ামী লীগ, মোজাফফর ন্যাপ এবং মনি সিং এর কম্যুনিষ্ট পার্টি সামগ্রিকভাবে বাকশালে যোগদান করেন। সংসদের বিরোধী দলের ৮জন সদস্যের মধ্যে ৪জন বাকশালে যোগদান করেন। প্রবীণ নেতা জনাব আতাউর রহমান খানও বাকশালে যোগদান করে সুবিধাবাদী চরিত্র ও রাজনীতির এক নজীরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ২রা জুন ’৭৫ বাকশালে যোগদানের জন্য শেখ মুজিবর রহমানের কাছে ৯জন সম্পাদক আবেদন পেশ করেন। তারা হলেন বাংলাদেশ অবজারভার সম্পাদক ওবায়েদুল হক, জনাব নূরুল ইসলাম পাটোয়ারী, দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বজলুর রহমান, মর্নিং নিউজের সম্পাদক জনাব শামছুল হুদা, বাসস এর প্রধান সম্পাদক জাওয়াদুল করিম, বাংলাদেশ টাইমস ও বাংলার বাণীর নির্বাহী সম্পাদক শহীদুল হক, দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক জনাব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং বিপিআই সম্পাদক জনাব মিজানুর রহমান। ৬ই জুন ’৭৫ বাকশালের সাংগঠনিক কাঠামো ও গঠনতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। তাতে দলের মহাসচিব মনোনীত হন মনসুর আলী। সচিব হন জিল্লুর রহমান, শেখ ফজলুল হক মনি, এবং আব্দুর রাজ্জাক। ঐ দিন বাকশালের কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য হিসাবে ১১৫জনের নাম ঘোষণা করা হয়। তাতে উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সশস্ত্র বাহিনী প্রধানরা, বিডিআর এর মহাপরিচালক, রক্ষীবাহিনীর পরিচালক, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রমুখকে অর্ন্তভূক্ত করা হয়।

দলের কার্যনির্বাহী পরিষদে থাকেন: (১) শেখ মুজিবর রহমান (২) সৈয়দ নজরুল ইসলাম (৩) মনসুর আলী (৪) খন্দোকার মোশতাক আহমেদ (৫) আবু হাসনাত মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (৬) আব্দুল মালেক উকিল (৭) অধ্যাপক ইফসুফ আলী (৮) মনরঞ্জন ধর (৯) মহিউদ্দিন আহমেদ (১০) গাজী গোলাম মোস্তফা (১১) জিল্লুর রহমান (১২) শেখ ফজলুল হক মনি (১৩) আব্দুর রাজ্জাক।

কেন্দ্রিয় কমিটিতে থাকেন: (১) শেখ মুজিবর রহমান (২) সৈয়দ নজরুল ইসলাম (৩) মনসুর আলী (৪) আব্দুল মালেক উকিল (৫) খন্দোকার মোশতাক আহমেদ (৬) কামরুজ্জামান (৭) মাহমুদ উল্লাহ (৮) আব্দুস সামাদ আজাদ (৯) ইউসুফ আলী (১০) ফনিভূষণ মজুমদার (১১) ডঃ কামাল হোসেন (১২) সোহরাব হোসেন (১৩) আব্দুল মান্নান (১৪) আব্দুর রব সেরনিয়াবাত (১৫) মনোরঞ্জন ধর (১৬) আব্দুল মতিন (১৭) আসাদুজ্জামান (১৮) কোরবান আলী (১৯) ডঃ আজিজুর রহমান মল্লিক (২০) ডঃ মোজাফফর আহমদ চৌধুরী (২১) তোফায়েল আহমেদ (২২) শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন (২৩) আব্দুল মোমেন তালুকদার (২৪) দেওয়ান ফরিদ গাজী (২৫) অধ্যাপক নূরুল ইসলাম চৌধুরী (২৬) তাহের উদ্দিন ঠাকুর (২৭) মোসলেম উদ্দিন খান (২৮) মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মঞ্জুর (২৯) একেএম ওবায়দুর রহমান (৩০) ডঃ ক্ষিতিশচন্দ্র মন্ডল (৩১) রিয়াজুদ্দিন আহমদ (৩২) এম বায়তুল্লাহ (৩৩) রুহুল কুদ্দুস সচিব (৩৪) জিল্লুর রহমান (৩৫) মহিউদ্দিন আহমদ এমপি (৩৬) শেখ ফজলুল হক মনি (৩৭) আব্দুর রাজ্জাক (৩৮) শেখ শহীদুল ইসলাম (৩৯) আনোয়ার চৌধুরী (৪০) সাজেদা চৌধুরী (৪১) তসলিমা আবেদ (৪২) আব্দুর রহিম (৪৩) ওবায়দুল আউয়াল (৪৪) লুৎফর রহমান (৪৫) একে মুজিবর রহমান (৪৬) ডঃ মফিজ চৌধুরী (৪৭) ডঃ আলাউদ্দিন (৪৮) ডঃ আহসানুল হক (৪৯) রওশন আলী (৫০) আজিজুর রহমান আক্কাস (৫১) শেখ আবদুল আজিজ (৫২) সালাহউদ্দিন ইউসূফ (৫৩) মাইকেল সুশীল অধিকারি (৫৪) কাজী আব্দুল হাশেম (৫৫) মোল্লা জালাল উদ্দিন (৫৬) শামসুদ্দিন মোল্লা (৫৭) গৌর চন্দ্র বালা  (৫৮) কাজী গোলাম মোস-ফা (৫৯) শামসুল হক (৬০) শামসুজ্জোহা (৬১) রফিকুদ্দিন ভূইয়া (৬২) সৈয়দ আহমদ (৬৩) শামসুর রহমান খান (৬৪) নূরুল হক (৬৫) এম এ ওহাব (৬৬) ক্যাপ্টেন সুজ্জাত আলী (৬৭) এম আর সিদ্দিক (৬৮) এমএ ওহাব (৬৯) চিত্তরঞ্জন সুতার (৭০) সৈয়দা রাজিয়া বানু (৭১) আতাউর রহমান খান (৭২) খন্দোকার মোহাম্মদ ইলিয়াস (৭৩) সংপ্রু সাইন (৭৪) অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ (৭৫) আতাউর রহমান (৭৬) পীর হাবিবুর রহমান (৭৭) সৈয়দ আলতাফ হোসেন (৭৮) মোহাম্মদ ফরহাদ (৭৯) মতিয়া চৌধুরী  (৮০) হাজী দানেশ (৮১) তৌফিক ইমাম সচিব (৮২) নূরুল ইসলাম (৮৩) ফয়েজ উদ্দিন সচিব (৮৪) মাহবুবুর রহমান সচিব (৮৫) আব্দুল খালেক (৮৬) মুজিবুল হক সচিব (৮৭) আব্দুর রহিম সচিব (৮৮) মঈনুল ইসলাম সচিব (৮৯) সহিদুজ্জামান সচিব (৯০) আনিসুজ্জামান সচিব (৯১) ডঃ এ সাত্তার সচিব (৯২) এম এ সামাদ সচিব (৯৩) আবু তাহের সচিব (৯৪) আল হোসাইনী সচিব (৯৫) ডঃ তাজুল হোসেন সচিব (৯৬) মতিউর রহমান টিসিবি চেয়ারম্যান (৯৭) মেজর জেনারেল কেএম সফিউল্লাহ (৯৮) এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দোকার (৯৯) কমোডর এমএইচ খান (১০০) মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান (১০১) একে নজিরউদ্দিন (১০২) ডঃ আব্দুল মতিন চৌধুরী (১০৩) ডঃ মাযহারুল ইসলাম (১০৪) ডঃ এনামুল হক (১০৫) এটিএম সৈয়দ হোসেন (১০৬) নূরুল ইসলাম আইজি পুলিশ (১০৭) ডঃ নীলিমা ইব্রাহিম (১০৮) ডঃ নূরুল ইসলাম (পিজি হাসপাতাল) (১০৯) ওবায়দুল হক (সম্পাদক অবজারভার) (১১০) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (ইত্তেফাক) (১১১) মিজানুর রহমান (বিপিআই) (১১২) মনোয়ারুল ইসলাম (১১৩) ব্রিগেডিয়ার এএমএম নূরুজ্জামান (রক্ষীবাহিনী প্রধান) (১১৪) কামরুজ্জামান শিক্ষক সমিতি (১১৫) ডঃ মাজহার আলী কাদরী।

একই ঘোষণায় বাকশালের পাচঁটি অঙ্গ সংগঠনও গঠন করা হয়। সেগুলো হচ্ছে:
জাতীয় কৃষকলীগ,
জাতীয় শ্রমিক লীগ,
জাতীয় মহিলা লীগ,
জাতীয় যুবলীগ ও
জাতীয় ছাত্রলীগ। এগুলোর সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন যথাক্রমে ফনিভূষণ মজুমদার, অধ্যাপক ইউসূফ আলী, সাজেদা চৌধুরী, তোফায়েল আহমদ ও শেখ শহীদুল ইসলাম। এসমস্ত সংগঠনের কেন্দ্রিয় কমিটিগুলোতে মোজাফফর ন্যাপ ও মনি সিংএর কম্যুনিষ্ট পার্টির নেতাদের গ্রহণ করা হয়। বাকশালের এ সূত্র ধরেই ১৬ই জুন ‘সংবাদপত্র বাতিল অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়। তার বলে পার্টি নিয়ন্ত্রণাধীন শুধুমাত্র চারটি দৈনিক ও কয়েকটি সাপ্তাহিক বাদে সকল পত্র-পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়। গণতন্ত্রের হত্যাযজ্ঞ শেষে দেশ জুড়ে চলে তান্ডব উৎসব। রুদ্ধশ্বাস মানুষ জীবনের নিরাপত্তা হারিয়ে জন্মভূমিতেই বন্দী হয়ে পড়েন স্বৈরশাসনের নিষ্পেষনে।