মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 

সংসদে সংবিধান গৃহিত হয়

 
   
 

১০ই এপ্রিল ১৯৭২ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। পরিতাপের বিষয় ঐ সংসদের সব সাংসদরাই ছিলেন পাকিস্তানের সংবিধান এবং জেনারেল ইয়াহিয়া খানের এলএফও-এর আওতায় নির্বাচিত।

মজলুম নেতা মাওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগের সংবিধান গঠনের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, “বর্তমান সংসদ গঠিত হয়েছিল ১৯৭০ সালের LFO (Legal Frame Work)  এর অধিনে সংগঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে। জেনারেল ইয়াহিয়া খানের LFO মোতাবেক নির্বাচিত জাতীয় সংসদের দায়িত্ব ছিল পাকিস-ানের সংবিধান প্রণয়ন করা। আওয়ামী লীগ দল হিসাবে ছয় দফার ভিত্তিতে জনগণের কাছ থেকে ভোট গ্রহণ করেছিল। ছয় দফার দাবি ছিল পাকিস্তানের ভৌগলিক অখন্ডতা বজিয়ে রেখে প্রদেশ ভিত্তিক পূর্ণ স্বায়ত্ত্ব শাসন কায়েম করা। অতএব স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের কোন বৈধ অধিকার তাদের নেই। তিনি সর্বদলীয় জাতীয় কনভেনশন গঠন করে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের দাবি জানান। তিনি বলেন, জাতীয় কনভেনশনে শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিই থাকবে না তাতে বিভিন্ন সংগঠন যাদের সদস্যরা জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের প্রতিনিধিদেরও অর্ন্তভুক্ত করতে হবে। এ ধরণের জাতীয় কনভেনশনের দ্বারা প্রণীত সংবিধান পরে গণভোটের মাধ্যমে গৃহিত হবে।”

আওয়াশী লীগ সরকার ঐ প্রতিবাদে কর্ণপাত না করে ১২ই অক্টোবরের সংসদ অধিবেশনে তৎকালীন আইনমন্ত্রী ডঃ কামাল হোসেন প্রণীত সংবিধান গৃহিত হয়। যদিও সংবিধানে সরাসরিভাবে মুজিববাদের উল্লেখ ছিল না তবুও মুজিববাদের মূলনীতির উপর তথা ভারতীয় সংবিধানের নীতিমালার উপর ভিত্তি করেই গঠিত হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান বা শাসনতন্ত্র।

সরকার ঘোষণা করলো দেশে সমাজতন্ত্র প্রবর্তন করা হবে কিন্তু সংবিধানের ৪২নং ধারার মাধ্যমে ব্যক্তি মালিকানা বজিয়ে রাখা হলো। ৩৫, ৩৭, ৩৯ নং ধারার মাধ্যমে অতি চতুরতার সাথে মানুষের মানবিক অধিকারসমূহ কেড়ে নেয়া হলো। আওয়ামী লীগ বিরোধী শক্তিকে অতি নির্দয়ভাবে উৎপাটন করার জন্য সংবিধানে ৬৩(৩) ধারা সংযোজিত করে। ‘জননিরাপত্তার’ নামে আইয়ূব শাহীর বর্বরোচিত আচরণের মতই মুজিবের নেতৃত্বে বিনা বিচারে আটক এবং মিল কারখানায়, অফিস-আদালতে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করার বিধানও সংবিধানে রাখা হয়।