মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 

ভবিতব্য সত্যি হলো

 
   
 

 

বিবিসির একটি সাংবাদিকের দল মাসিমপুর সামরিক হাসপাতালে আমার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে।

জুলাই মাসের শেষার্ধে লাঠিটিলার যুদ্ধে আমি দ্বিতীয়বারের মত আহত হই মর্টারের গোলা ও মেশিনগানের গুলিতে। চিকিৎসার জন্য আমাকে শীলচরের মাসিমপুর সিএমএইচ এ নিয়ে যাওয়া হয়। আহত অবস্থাতেও আমাকে হাসপাতাল কক্ষ থেকেই যুদ্ধ পরিচালনা করতে হয়। আমার ঘরটাতেই স্থাপন করি ছোট খাট একটি op’s room । এ ব্যাপারে আমাকে বিশেষভাবে সাহায্য করেন ব্রিগেডিয়ার ভট্‌কে, কর্নেল বাগচী, মেজর দাসগুপ্ত ও ক্যাপ্টেন চ্যাটার্জী। আমি যখন আহত অবস্থায় হাসপাতালে তখন বিবিসি লন্ডন থেকে সাংবাদিকদের একটি প্রতিনিধি দল এলেন আমাদের সিলেট সেক্টরে। তারা আমার সাথে আলাপ করতে চান। আমার আপত্তি নেই জেনে তারা এলেন আমার হাসপাতালের রুমে। ঘরে আমি তখন শয্যাশায়ী। পরিচয়পর্ব শেষে তাদের একজন চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে বললেন,
-এতো দেখছি একটা ছোটখাটো op’s room. অসুস্থ অবস্থায় এ সমস্ত ম্যাপ, ওয়্যারলেস সেট প্রভৃতি নিয়ে আপনি কি করেন?
-আমি আহত হয়ে কিছুদিনের জন্য এখানে শয্যাশায়ী হয়ে আছি বলে যুদ্ধতো বন্ধ হয়ে যায়নি। যুদ্ধ চলছে এবং চলবে। সেক্ষেত্রে সাধ্যমত যতটুকু সম্ভব দায়িত্ব বিছানায় শুয়েও আমি পালন করে যাবার চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন করলেন আর একজন,
-শুনেছি আপনি আরো দু’জন অফিসারের সাথে পাকিস্তান থেকে সর্বপ্রথম পালিয়ে এসে যুদ্ধে যোগদান করেছেন। আপনার আপন-পরিজনদের সবাইতো বাংলাদেশে রয়েছেন। তাদের উপর পাক বাহিনীর তরফ থেকে প্রতিশোধ নেবার চেষ্টা হতে পারে। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি?
-আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম জাতীয় সংগ্রাম। এ সংগ্রামে অবদান রাখার পবিত্র দায়িত্ব পালন করার জন্যই আমরা পালিয়ে এসেছি। আজ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পরিবার থেকেই সদস্যরা এসে যোগদান করেছেন মুক্তিযুদ্ধে। দেশকে শত্রুর কবল থেকে স্বাধীন করার জন্যে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন তারা। তাদের এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের পরিবার-পরিজনদের ভাগ্যে যা ঘটবে আমার আত্মীয়-স্বজনদের ভাগ্যেও ঠিক তাই ঘটবে। অতএব, এ নিয়ে আমার চিন্তা করার কিছু নেই। আপনজনদের শত্রুর পাশবিক নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে দেশকে স্বাধীন করতে হবে । তাইতো আমরা মরণপন যুদ্ধ করে যাচ্ছি দেশকে শত্রুমুক্ত করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আজাদী লাভ করার লক্ষ্যে। স্বাধীনতার প্রশ্নে কোন আপোষ নেই। দেশকে স্বাধীন করে ছাড়বোই ইনশাল্লাহ্‌।
আমার জবাব শুনে তাদের একজন মন্তব্য করেছিলেন,
-আপনাদের মত সন্তান যে দেশ জন্ম দিয়েছে তার স্বাধীনতা পৃথিবীর কোন শক্তিই রোধ করতে পারবে না।
ভদ্রলোকের কথাগুলো আজও মনে আশার আলো যোগায়, ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদী হয়ে উঠি। ১২ কোটি জাগ্রত বাংলাদেশী দাসত্বের সব শৃঙ্খল ভেঙ্গে চুর্নবিচুর্ন করে দেবে নিশ্চয়ই। স্বাধীন মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে সব চক্রান্তের জাল ছিন্নভিন্ন করে দিয়ে মাথা উঁচু করে দাড়াবেই একদিন। আমার সাথে সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকারটি পরে বিবিসি থেকে প্রচারিত হয়েছিল। এ প্রচারণা থেকেই আমার আত্মীয়-স্বজনরা সর্বপ্রথম জানতে পারেন, আমি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছি।