মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 

ভৌগলিক সীমানা বিকৃত করার চক্রান্ত

 
   
 

 

বর্তমান বাংলাদেশ আদি বঙ্গের একটি অংশমাত্র। ১৯৭১ সালে জাতীয় পতাকার মাঝখানে পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র বসিয়ে দেয়ার বিষয়টি ছিল চক্রান্তমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা এবং সচেতন জনতার বিরোধিতার চাপে মুজিবনগর সরকার মানচিত্র সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়। আদি বঙ্গের পরিসীমা নির্ধারিত ছিল এভাবে:-

উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা, নেপাল, সিকিম এবং ভূটান। উত্তরপূর্ব দিকে ব্রহ্মপুত্র এবং এর অববাহিকার গড়ে উঠা ব-দ্বীপ অঞ্চল, উত্তর পশ্চিমে দাড় গঙ্গা, উত্তরে সমান্তরালভাবে প্রবাহিত ভাগিরথী নদীর অববাহিকার সমতলভূমি, পূর্বদিকে বার্মার পর্বতমালা, পশ্চিম বঙ্গের সর্বাঞ্চল, বীরভূম, মালভূম, ধলভূম, কেওজ্ঞর, ময়ুরভজ্ঞের অরণ্যময় মালভূমি, দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর। এই সমগ্র জায়গা নিয়েই ছিল প্রাচীনকালের বঙ্গ অথবা বাংলাদেশ। উল্লেখযোগ্য জনপদগুলো ছিল গৌড়, পুন্ড্র, বরেন্দ্র, রাড়, সুহ্ম্র, তাম্রলিপ্ত, সমতট, বঙ্গ, বাঙ্গাল, হরিকল প্রভৃতি জনপদ গড়ে তুলেছিল বঙ্গবাসী বা বাংলাদেশীরা। কোল, ভীল, সাবর, পুলিন্দ, হড়ী, ডোম, চন্ডাল, সাওঁতাল, মুন্ডা, ওরাঁও, ভূমিজ, বাগদী, বাউড়ী, পোদ, মালপাহাড়ী প্রমুখ অস্তজ এদের সমন্বয়েই সৃষ্টি হয়েছিল বঙ্গবাসী অথবা বাঙ্গালী জাতিগোষ্ঠি। কালের আবর্তে বিদেশী আগ্রাসী শক্তিসমূহ এদেশকে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশকে বিভক্ত করেছে তাদের শাসন ও শোষণ কায়েম রাখার জন্য ভৌগোলিক দ্বিধা-বিভক্তির ফলে জাতি হয়ে পরেছে বিভক্ত। কিন্তু ভৌগোলিক সীমানা অপরিবর্তনীয় নয়। আমাদের পূর্ব পুরুষরা গড়ে তুলেছিলেন সর্বোৎকৃষ্ট জনপদ, শহর, নগর, বন্দর এবং সমৃদ্ধ রাজ্য ও জনপদ। তারা সৃষ্টি ও বিকাশ ঘটিয়েছিলেন উন্নতমানের সংস্কৃতি এবং বিষ্ময়কর ঐতিহ্যবাহী শিল্প ব্যবস্থা। এর সবকিছুই আমাদের জাতীয় গৌরব। কায়েমী স্বার্থবাদীরা যতই চেষ্টা করুক না কেন আমাদের আবাসভূমি সীমানা সর্ম্পকে ধূম্রজাল সৃষ্টি করতে এবং জাতীয়তাবাদ নিয়ে জটিলতা এবং উৎভ্রান্তি সৃষ্টি করতে যাতে করে তাদের কায়েমী স্বার্থ টিকে থাকে তা একদিন নস্যাৎ হয়ে যাবে। কোন বিতর্ক সৃষ্টি করতে জনগণকে সর্বকালের জন্য বোকা বানিয়ে রাখা কিছুতেই সম্ভব হবে না। জাতি একদিন ঐতিহাসিক সত্যকে অনুধাবন করতে সক্ষম হবে এবং ইনশাল্লাহ এমন একদিন নিশ্চয়ই আসবে যখন তারা তাদের দীর্ঘদিনের অন্যায় এবং বঞ্চনার হিসাব-নিকাশ করে তাদের ঐতিহাসিক পাওনা আবার আদায় করে নেবে।