মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 

সেনা পরিষদ সাময়িকভাবে চিহ্নিত নেতাদের দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়।

 
   
 

 

লক্ষ্য অর্জনের জন্য এটা ছিল একটি সাময়িক কৌশল মাত্র।

প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের পর সেনা পরিষদের কার্যনিবাহী কমিটির উপস্থিত সদস্যদের নিয়ে এক জরুরী বৈঠক হয়। বৈঠকে বাস্তব অবস্থার পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় যে, শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের exposed নেতারা কৌশলগত কারণে দেশ ত্যাগ করে দেশের কাছাকাছি কোন রাষ্ট্রে সাময়িকভাবে অবস্থান নেবে। সার্বিক বিবেচনায় ব্যাংকক-কেই সর্বত্তোম জায়গা হিসাবে বিবেচিত করা হয়। এরপর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, কি করে খালেদ চক্রের পতন ঘটাতে হবে সেই বিষয়ে। জাতীয় বেঈমান পরাজিত আওয়ামী-বাকশালী গোষ্ঠি এবং তাদের মুরুব্বী ভারতের হাতে ক্রিয়াণক খালেদ চক্রকে উৎখাত করার জন্য সেনা পরিষদ কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বাধীন গণবাহিনী এবং জাতীয়তাবাদী-দেশপ্রেমিক অন্যান্য দল ও গ্রুপ নূন্যতম কর্মসূচীর ভিত্তিতে খালেদ চক্রের মুখোশ উন্মোচিত হবার পর উপযুক্ত সময়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আর একটি অভ্যুত্থান ঘটাবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঐ বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল সেটা ছিল প্রেসিডেন্ট মোশতাক এবং জেনারেল জিয়াউর রহমানের সম্পর্কে। সফল বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে খালেদ চক্রের পতনের পর সর্বপ্রথম কাজ হবে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী অবস্থা থেকে মুক্ত করে তাকে আবার সেনা প্রধান হিসাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। নিজ পদে অধিষ্ঠিত হবার পর জেনারেল জিয়াউর রহমান জনাব খন্দোকার মোশতাক আহমদকে পুনরায় রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার আহ্‌বান জানাবেন। আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, নেতৃবৃন্দের যে অংশ ব্যাংককে অবস্থান করবে তার সাথে প্রয়োজনমত যোগাযোগ রক্ষা করে চলবে সেনা পরিষদ। জরুরী বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টের ইউনিটগুলোকে জানিয়ে দেবার বন্দোবস্ত করা হয়। কর্নেল তাহেরও তখন বঙ্গভবনে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে তিনি বঙ্গভবন ত্যাগ করেন। বৈঠক যখন শেষ হয় তখন প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাংককে যাবার সব ব্যবস্থা করার জন্য প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারীয়েট থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ব্রিগেডিয়ার খালেদকে আমাদের দেশ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত জানাবার জন্য ফোন করলাম,
- স্যার, আমাদের ভবিষ্যত করণীয় সম্পর্কে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ব্যাপারে আপনি হয়তো বা জেনেও থাকতে পারেন। তবুও কথা দিয়ে এসেছিলাম তাই কথা রক্ষার্থে জানাচ্ছি: রশিদ, ফারুক, শাহরিয়ার, নূর, পাশা, হুদা, রাশেদ, মহিউদ্দিন, শরফুল, মাজেদ, কিসমত, নাজমুল, মোসলেম, হাশেম, মারফত এবং আমি স্বপরিবারে দেশ ছেড়ে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজ রাতেই চলে যাব আমরা। প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারীয়েটের মাধ্যমে। আপনার সাথে সহযোগিতা করার অনুরোধ রাখা সম্ভব হল না স্যার। দেশ ও জাতির জন্য ভবিষ্যতে আর কিছু করার তৌফিক আল্লাহ্‌পাক যদি নাই দেন সেটা মেনে নিতে পারব; কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ’৭১ এর চেতনা এবং নীতির প্রশ্নে আপোষ করে জাতীয় বেঈমান হিসাবে পরিচিতির যে গ্ল্যানি সেটা সহ্য করা আমাদের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়; হবেও না কোনদিন।
- রশিদ-ফারুক সম্পর্কে আমাদের বিরূপ মনোভাব আছে, তারা দেশ ছেড়ে যেতে চাইতে পারে কিন্তু তোমরা দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছ কেন সেটা এখনো বুঝতে পারছি না। আবার কথাগুলোর পুনরুক্তি করলেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ।
মুখে আন্তরিকতা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করলেও বুঝেছিলাম আমাদের দেশ ত্যাগের খবরটা পেয়ে হাঁফ ছেড়েই বেচেঁছিলেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ এবং তার সহযোগিরা এটা ভেবে যে, তাদের প্রতিপক্ষের একটি শক্তিশালী গোষ্ঠির threat থেকে রেহাই পেলেন তারা।

এভাবেই দেশ ও জাতিকে একটি সম্ভাব্য আত্মঘাতী রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের হাত থেকে বাঁচিয়ে খালেদ চক্র ও নব্য চানক্যদের ষড়যন্ত্রকে পরাস্ত করার কৌশলগত কারণেই ৩রা নভেম্বর ১৯৭৫ সাল রাত সাড়ে দশটায় বিমানের একটি স্পেশাল ফ্লাইটে আমরা দেশ ছেড়ে চলে এসেছিলাম।

 
 
 
     
     
  Design & Developed By: Hemu
All Rights Reserved 2008 @www.majordalimbangla.net