মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 

আবেদুর রহমান অতি কৌশলে ঘুষ দেবার ধৃষ্টতা দেখান

 
   
 

 

প্রত্যেক ধনী ব্যক্তিই মনে করে যেকোন জিনিষই টাকায় কেনা যায়।

অক্টোবরের শেষাশেষি ঘটলো আরেকটি ঘটনা। এক সন্ধ্যায় মেজর শাহরিয়ার রেডিও কন্ট্রোল থেকে জরুরী ফোন করে ডেকে পাঠালো।
- হ্যালো স্যার, আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম।
- আজ রাতে আবেদুর রহমানকে custody থেকে বের করে লন্ডন পাঠাবার বন্দোবস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট; এ বিষয়ে আপনি কিছু জানেন কি? বলল শাহরিয়ার।
- না তো; এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
- স্যার, র্দুনীতির অভিযোগে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের এভাবে বিনা বিচারে ছেড়ে দেয়া হলে এ সরকারের সুনাম ক্ষুন্ন হবে। লোকজন বলাবলি করবে আবার সেই পুরনো খেলাই শুরু হল, টাকা-পয়সার লেনদেনের মাধ্যমে র্দুনীতিবাজরা নিজেদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
- তুমি ঠিকই বল্‌ছো শাহরিয়ার। তোমার খবর যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে কিছুতেই আবেদুর রহমানকে বিদেশে যেতে দেয়া ঠিক হবে না। তুমি পুনরায় তাকে আটক করার ব্যবস্থা করো। তাকে ধরতে হবে এয়ারর্পোট থেকে; যাতে করে এর পিছনের মূল ব্যক্তিদের পরিচয় পাওয়া যায়। অভিযুক্ত কাউকে ছেড়ে দেবার অধিকার কারো নেই। After you get him let me know.
- OK Sir, I shall do everything that is necessary. টেলিফোন রেখে দিল শাহরিয়ার।

মাঝ রাতের লন্ডনগামী ফ্লাইটে বিশেষ ব্যবস্থায় তুলে দেয়া হয়েছিল আবেদুর রহমানকে। প্লেনের ভিতর থেকেই off load করে ধরে এনেছিল শাহরিয়ারের পাঠানো টাস্কফোর্স। খবর পেয়ে আমি গিয়ে উপস্থিত হলাম শাহরিয়ারের কন্ট্রোল রুমে। আইজি জনাব নূরুল ইসলাম এবং গ্রেফতারকৃত বিশেষ ব্যক্তিদের ইনচার্জ ডিআইজি জনাব ইএ চৌধুরীকেও ডেকে আনা হল। কারণ, খবর পাওয়া গিয়েছিল এ ব্যাপারে তাদের হাত রয়েছে। জনাব ইএ চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করলাম,
- স্যার, র্দুনীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের দায়িত্বেতো আপনিই রয়েছেন তাই না?
- জ্বী হ্যাঁ। জবাবে বললেন জনাব চৌধুরী।
- সেক্ষেত্রে জনাব আবেদুর রহমানকে ছাড়পত্র দিয়ে প্লেনে তুলে দেবার বন্দোবস্ত করলেন কার হুকুমে? আমার অপ্রত্যাশিত প্রশ্নে কিছুটা ভড়কে গেলেন জনাব চৌধুরী। আমতা আমতা করে বললেন, আইজি সাহেবের হুকুমেই এ ব্যবস্থা করেছিলাম আমি।
- আইজি সাহেব আপনি কি করে এ ধরণের হুকুম দিলেন ? থতমত খেলেন আইজি সাহেব।
- প্রেসিডেন্টের কথামত কাজ করেছি আমি।
- প্রেসিডেন্ট সাহেব এ ব্যাপারে কোন লিখিত অর্ডার দিয়েছেন কি? প্রশ্ন করলাম।
- জ্বী না। টেলিফোনে বলেছিলেন।
- টেলিফোনের কথা যদি এখন প্রেসিডেন্ট অস্বীকার করেন তখন আপনার অবস্থা কি হবে আইজি সাহেব? আইনের রক্ষক হয়ে এ ধরণের কাজ করাটা ঠিক হয়েছে কি আপনার? আমার কথায় ভীষণভাবে ঘাবড়ে গেলেন পুলিশের জাদরেল অফিসার জনাব ইসলাম। কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বললেন,
- মেজর সাহেব, উপরওয়ালাদের ইচ্ছা আমাদের মত জুনিয়রদের জন্য হুকুমেরই সমান।
- বাহ্‌! বেশ বলেছেন! ঔপনিবেশিক আমলাদের এই বিশেষ গুনটি ভালোই জানা আছে আপনার। কিন্তু বাংলাদেশতো একটি স্বাধীন দেশ। এক্ষেত্রে এমন একটি আইন বিরোধী কাজ করতে এতটুকুও বাধলোনা আপনার! বাধবেই বা কেন? ঘুনে ধরা ব্যবস্থার শিকার আপনারা আমরা সবাই। স্বাধীনতা পূর্বকালে ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্র সৃষ্টি করে তৃতীয় বিশ্বের সব দেশেই শোষণ কায়েম রেখেছিল বিদেশী শাসকরা। তথাকথিত স্বাধীনতা লাভের পর সেই আমলাতন্ত্রের অবকাঠামো অটুট রেখে দেশকে লুটেছে সাদা চামরার জায়গায় জাতীয় ব্রাউন সাহেবরা! তাদের ঐ অপশাসন-শোষণে সবসময়েই মদদ যুগিয়ে এসেছে ভাগীদার হিসাবে সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র। অসৎ রাজনীতিবিদ এবং আমলাতন্ত্রের মাঝে জাতীয় সম্পদের ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে এসেছে সব আমলেই। কিন্তু এই লুটপাটের দায়-দায়িত্ব কখনোই বহন করতে হয়নি আমলাতন্ত্রকে, সব দায় বহন করতে হয়েছে শুধু রাজনীতিবিদদেরই। আমলারা হেফাজতে থেকেছেন সব সময়েই back stage player হিসাবে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু সেই অপকর্মের ধারাবাহিকতা বজায়ে রাখার জন্য মুক্তিযুদ্ধ কিংবা আগষ্ট বিপ্লব হয়নি। এই দু’টো সংগ্রামই করা হয়েছে জাতীয় পরিসরে সর্বক্ষেত্রে গণমুখী পরিবর্তন আনার জন্য। সেক্ষেত্রে সময়ের দাবিতে আমাদের মন-মানসিকতা বদলাতে হবে তা না হলে সব কিছুই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আইজি সাহেব প্রেসিডেন্ট যদি আপনাকে সে ধরণের কোন কথা বলেও থাকেন তখন একজন অভিজ্ঞ অফিসার হিসাবেতো আপনার বলা উচিত ছিল যে, কাজটা বেআইনী বিধায় করা ঠিক হবে না; তাই নয় কি? আশা করি আগামীতে এধরণের ঘটনা আর ঘটবে না। আবেদুর রহমানকে ধরে আনা হয়েছে যাবার সময় তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন। আইন সবার জন্যই সমান; কথাটা কাজেও প্রমাণিত হওয়া উচিত; কি বলেন?

তাদের সাথে আলাপ শেষ করে জনাব আবেদুর রহমানকে ডাকিয়ে আনা হল। আমাদের সামনে এসেই তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে বলতে লাগলেন,
- স্যার, আমি জীবনে অনেক অন্যায় কাজ করেছি। যথেষ্ট টাকা-পয়সাও অর্জন করেছি অসৎ উপায়ে। আমি তার প্রায়ঃশ্চিত্ত করতে চাই। আমাকে একটা সুযোগ দেন আপনারা। বলেই বিদেশী একটি ব্যাংকের চেক বুক বের করে তার কয়েকটা ব্ল্যাঙ্ক পাতায় সই করে সেটা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে বললেন,
- বিদেশে আমার যা গচ্ছিত আছে তার সবটাই আমি আপনাদের দিয়ে দিতে চাই স্বেচ্ছায়।
কি সাংঘাতিক লোক! প্রকারন্তরে ঘুষ দিতে চাচ্ছেন তিনি। উপস্থাপনাটা অতি অভিনব এবং চমৎকার। তার সাথে আর কোন কথা বলতে রুচিতে বাধলো। শাহরিয়ারকে বললাম,
- আমি চললাম, অনেক রাত হয়ে গেছে। তুমি আবেদুর রহমান সাহেবকে আইজি সাহেবকে হ্যান্ড ওভার করে দাও বলে ফিরে এসেছিলাম।

 
 
 
     
     
  Design & Developed By: Hemu
All Rights Reserved 2008 @www.majordalimbangla.net