মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 

একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা

 
   
 

 

একটি তরুণ প্রতারক আমার নাম ভাঙ্গিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে।

একদিন রাতে ক্যাবিনেট মিটিং শেষ হবার পর মন্ত্রীমহোদয়গণ বঙ্গভবনের করিডোরে বেরিয়ে এসেছেন। হঠাৎ মন্ত্রী জনাব রিয়াজুদ্দিন আহমদ ভোলা মিয়া আমাকে ডেকে একটু নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ফিস্‌ ফিস্‌ করে বললেন,
- ডালিম, তোমার পাঠানো লোকটার কাজটা করে দিয়েছি। কালই পারমির্টটা ইস্যু করে দেবার জন্য সেক্রেটারী সাহেবকে অর্ডার দিয়েছি। আমি আকাশ থেকে পড়লাম।
- চাচা, আমিতো কোন লোককে পাঠাইনি আপনার কাছে। ব্যাপারটা একটু খুলে বলুনতো? আমার জবাবে তিনি একটু বিব্রত হলেন। বললেন,
- এক যুবক সকালে আমার অফিসে এসে বলল, তুমি তাকে পাঠিয়েছ অনুরোধ জানিয়ে তাকে যাতে ৫০ লক্ষ টাকার একটা কাঠের পারমিট দিয়ে দেয়া হয় যত শীঘ্র সম্ভব। সব শুনে আমি ’থ হয়ে গেলাম। কি সাংঘাতিক ব্যাপার! আমাকে বেচার চেষ্টা করছে কেউ! লোকটা কে জানার একটা কৌতুহল হল। বললাম,
- এক কাজ করেন চাচা, আগামীকাল লোকটা যখন পারমিটটা নিতে আসবে তখন আপনি আমাকে জানাবেন, আমি আসব দেখার জন্য লোকটা কে! আপনি আমার পরিচয় দেবেন আপনার দূর সম্পর্কের কোন আত্মীয় বলে। বাকিটা ঘটনাস্থলেই দেখবেন কি হয়।

পরদিন সকালে যুবক পৌঁছামাত্র আমি ফোন পেলাম। আমি কয়েকজন আইবির লোক সঙ্গে করে উপস্থিত হলাম মন্ত্রী সাহেবের দফতরে। চেম্বারে ঢুকে দেখি এক কেতাদুরস্থ তরুণ চাচার মুখোমুখি বসে চা খাচ্ছে। আমি সালাম জানিয়ে বসলাম যুবকের পাশেই। যুবকটি আমার পরিচিত নয়। চাচাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
- স্যার, আপনি বলেছিলেন আজ আসতে আমার ছোট ভাই এর আর্মিতে অফিসার র‌্যাঙ্কে ভর্তির ব্যাপারে। আপনি বলেছিলেন মেজর ডালিমের খুব ঘনিষ্ঠ কেউ আসবে আজ যার মাধ্যমে কাজটা করিয়ে দেবার চেষ্টা করবেন আপনি। আমার কথার ধরণ বুঝে নিয়ে মিনিষ্টার সাহেব বললেন,
- হ্যা, এই ভদ্রলোকই সেই ব্যক্তি। বলেই আমাকে তার দূর সর্ম্পকের আত্মীয় বলে পরিচয় করিয়ে অনুরোধ জানালেন,
- ভাই সাহেব, এর ছোট ভাই কমিশন র‌্যাঙ্কের জন্য আইএসএসবির অপেক্ষায় আছে। বুঝতেইতো পারেন এদেশে সুপারিশ ছাড়া কিছুই হয় না; আপনি মেজর সাহেবের খাস লোক তাই অনুরোধ জানাচ্ছি ওর কাজটা যদি করে দিতেন তবে খুবই উপকার হত। কথা শেষ হতেই যুবক বলল,
- কি যে বলেন মিনিষ্টার সাহেব, এতো খুবই সামান্য একটা কাজ। এর জন্য মেজর ডালিমের প্রয়োজন নেই। জেনারেল জিয়া কিংবা ব্রিগেডিয়ার খালেদকে বলে দিলেই যথেষ্ট। কথা শেষ করে যুবক আমার দিকে ফিরে তার একটা ভিজিটিং কার্ড দিয়ে বলল,
- আমার সাথে দেখা করবেন। আপনার সামনেই জেনারেল জিয়া এবং ব্রিগেডিয়ার খালেদকে ফোন করে আপনার সমস্যার সমাধান করে দেবো। তার সাহস ও আত্মপ্রত্যয় দেখে আমরা সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। যুবক দিব্যি আরামে বসে সিগারেট টানছিল আর কথা বলছিল। চাচার সাথে চোখাচোখি হল; দু’জনকেই কৃতজ্ঞতা এবং সালাম জানিয়ে বেরিয়ে এসে বাইরে অপেক্ষারত আইবির লোকদের বললাম, “লোকটা ধুরন্দর ঠগ; ভিতরে গিয়ে আপনারা আপনাদের কর্তব্য পালন করুন। তদন্তের রির্পোটটা আমাকে দেখাবেন।” পরে তদন্তে দেখা গিয়েছিল যুবকের নাম-ঠিকানা সবই ভূয়াঁ। রিপোর্টে ঠিক বোঝা যায়নি সমস্ত ব্যাপারটা একটা ঠগবাজী প্রতারণা ছিল নাকি এর পিছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল। ঘটনাটি হাতে নাতে ধরা না পড়লে আমার নামে র্দুনীতির অভিযোগ রটানো যেত অবশ্যই। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রচার মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে এধরণের প্রতারণার ব্যাপারে সচেতন থাকার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। আমরাও বিশেষভাবে সতর্ক হয়ে উঠেছিলাম। চোখ-কান খোলা রেখে চলতে হবে।

 
 
 
     
     
  Design & Developed By: Hemu
All Rights Reserved 2008 @www.majordalimbangla.net