মেজর ডালিম বাংলাদেশের ইতিহাসের না বলা সত্যকে জানুন

 

 

 
 
..ডালিম বলছি
..যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি
..জীবন বৃত্তান্ত
..সমসাময়িক ভাবনা
..প্রকাশিত বইসমগ্র
..কিছু কথা কিছু ব্যাথা
..ইংরেজী ভার্সন    
 
যে স্ফুলিঙ্গ লেলিহান শিখার জন্ম দিয়েছিল
 
   
 

 

২৫-২৬শে মার্চ ১৯৭১ সালের বিভিষিকাময় কালোরাত্রির কয়েকদিনের মধ্যে পাকিস্তান আর্মি ঢাকা শহর তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। টিভি এবং বেতারে সরকারি প্রচারণা স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের কর্মস্থলে ফিরে যেতে নির্দেশ জারি করা হয়। কিন্তু সমগ্র জাতি তখন যুদ্ধে নিয়োজিত।

মেজর জিয়ার তূর্যধ্বনি অগ্নিশিখার সৃষ্টি করেছিল সমগ্র জাতির মধ্যে। তার ডাকে সাড়া দিয়ে বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, পুলিশ, আনসার, মুজাহিদ বাহিনীর বাঙ্গালী সদস্যরা সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে সারাদেশে প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুললো। শুধুমাত্র ঢাকা শহরই পাক বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে রইলো। মুক্তিযোদ্ধারা জয় করে নিয়েছিলো দেশের অন্যান্য প্রায় সব অঞ্চল- চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা, নোয়াখালী, যশোর, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর। পুরো দেশটাই তখন মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রনে। স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র এবং আপমর জনসাধারন যোগ দিলেন বিদ্রোহী সৈনিকদের সাথে।

পুরো পূর্ব পাকিস্তানে এভাবেই তখন পরিণত হয়েছে এক যুদ্ধক্ষেত্রে। বিভিন্ন জায়গায় প্রচন্ড লড়াই হয়। সদ্য গঠিত মুক্তিবাহিনী সব জায়গাতেই অসীম সাহসিকতার সাথে খান সেনাদের সাথে আগ্রাসনের বিরোধিতা করছিল বীরবিক্রমে এবং প্রচন্ড সাহসিকতার সাথে। যতটুকু সম্বল ছিল তা দিয়েই সৈনিকরা ট্রেনিং দিচ্ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের। সবকিছুই ঘটছিল স্বতঃস্ফুর্তভাবে স্থানীয় ভিত্তিতে। পাক বাহিনী দেশের শহরগুলো পুনরোদ্ধার করার জন্য বিপুল পরিমাণে রিইনফোর্সমেন্ট পাঠাচ্ছিল প্রতিটি জেলা এবং মহকুমায়। ফলে এপ্রিলের মাঝামাঝি খানসেনারা শহর বন্দরগুলো দখল করে নিতে সক্ষম হয়। এর ফলে সম্মুখ যুদ্ধে না গিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দেশের গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে নিজেদের পুর্নগঠিত করে দীর্ঘমেয়াদী গেরিলা যুদ্ধের কৌশল গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ইতিমধ্যে হাজার হাজার শরনার্থী ভারতে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে। এদের বেশিরভাগই ছিল ‘হিন্দু’ সম্প্রদায়ের লোকজন। ভারত সরকার পরোক্ষভাবে প্রচার মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানায়। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারদের অনেকেই ভারত চলে যায় নিজেদের বাহিনী পুর্নগঠনের জন্য। কারণ সেই মুহুর্তে পাক বাহিনীর সুশিক্ষিত এবং উন্নতমানের অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত শক্তির মুখোমুখি মোকাবেলা করা কিছুতেই সম্ভব ছিল না মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে। এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে কমান্ডাররা সিদ্ধান্ত নেন দীর্ঘমেয়াদী গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সংগঠিত করে দেশ স্বাধীন করার।